dp power by developed & designed web blogs

Saturday, May 3, 2014

অপহরণচক্রে নারায়ণগঞ্জ-এবার ব্যবসায়ী অপহরণ, ২৪ ঘণ্টা পর মুক্ত

নারায়ণগঞ্জে মা-বোনের অশ্রু, স্ত্রীর আহাজারি, সন্তানের কান্না যেন আর থামার নয়। দিনদুপুরে সাত-সাতটি মানুষকে অপহরণ ও খুনের ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতেই আরেকজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হলো। তাঁর নাম সৈয়দ সাইফুল ইসলাম। ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, দিনভর বিক্ষোভ-আলটিমেটাম শেষে অপহরণের ২৪ ঘণ্টা পর গত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের নবীনগরে অপহরণকারীরা সাইফুলকে একটি হোটেলের সামনে ফেলে যায়। হোটেলের লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই র‌্যাব এসে তাঁকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
রাত পৌনে দুইটার দিকে র‌্যাব-৪-এর সাভার ক্যাম্পে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয় সাইফুলকে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁকে গাড়িতে তুলে নেয় অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। চেতনা ফেরার পর তিনি বুঝতে পারেন, চোখ, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কাঁচা মেঝেতে পড়ে আছেন। পরে এক সময় তাঁকে আবার গাড়িতে তুলে এক জায়গায় এনে বাঁধন খুলে ও কোমরে লাথি মেরে ফেলে দেয়। পরে তিনি জানতে পারেন এটি নবীনগর। তিনি বলেন, তাঁর কোনো শত্রু নেই। তাই কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা তিনি জানেন না।
গত সপ্তাহে অপহূত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের ছবি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। চার দিনের মাথায় তিনি স্বামীর ক্ষতবিক্ষত লাশ পেয়েছেন শীতলক্ষ্যা নদীতে। গতকাল হাতে স্বামী সৈয়দ সাইফুল ইসলামের (৩৫) ছবি আর চোখে অশ্রু নিয়ে রাস্তায় বেরোতে হয়েছে তাঁর স্ত্রী সাদিয়া আফরিনকে। গত সপ্তাহে নির্বিবাদী আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের ছবির দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে দেখা গেছে তাঁর মেডিকেল কলেজের শিক্ষিকা মেয়েকে। গতকাল ব্যবসায়ী বাবার ছবি হাতে নির্বাক বসে থাকতে দেখা গেল সাইফুলের দুই শিশুসন্তানকে।
এই বিভীষিকাময় সময়ে প্রশাসনকে পাশে না পেয়ে আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভও জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সপ্তাহজুড়ে কাউন্সিলর নজরুলের সমর্থকদের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ মহাসড়ক অবরোধ করে ক্ষোভ-বিক্ষোভ জানিয়েছেন। গতকাল রাস্তায় নেমেছেন ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী সবাই। সাইফুল সিদ্ধিরগঞ্জের সোনা মিয়া মার্কেটের সামিয়া সুপার শপ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী সাদিয়া আফরিন গতকাল সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাইফুল ইসলামের দোকানের ব্যবস্থাপক আবদুল হান্নানকে আটক করেছে।
সাদিয়া আফরিন জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সাইফুলের সঙ্গে তাঁর মুঠোফোনে শেষ কথা হয়। মুঠোফোনে সাইফুল তাঁকে জানান, তিনি এলাকার সানারপাড়ে আছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরছেন। এর আগে ফিরোজ নামে একজনের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন। ফিরোজের কাছে সাইফুল এক লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু ফিরতে দেরি হওয়ায় তিনি দ্বিতীয় দফায় ফোন করলে সাইফুলের মুঠোফোন বন্ধ পান। এর পর থেকে ফোনটি বন্ধ পান। সাদিয়া আফরিন সাংবাদিকদের জানান, একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তাঁর কাছে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।
অপহরণের এই ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেলা ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। দুপুর পৌনে ১২টায় সহকারী পুলিশ সুপার জাকারিয়া শুক্রবার রাতের মধ্যে সাইফুল ইসলামকে উদ্ধারের আশ্বাস দেন। ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন। সাইফুলের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তিনি আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কারণ এর আগে অপহূত সাতজনকে পুলিশ উদ্ধারের আশ্বাস দিলেও পরে তাঁদের লাশ পাওয়া গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সাইফুল উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ লোকজন আবার সানারপাড় রওশন আরা কলেজ গেট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং বেশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমিনুল ইসলাম জানান, জিডিতে ব্যবসায়ী সাইফুলের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও অপহরণের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। তবে পুলিশ ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মঈনুর রহমান জানান, সাইফুল ইসলামের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহিদ উদ্দিন বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
ভায়রাও নিখোঁজ!: ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া আফরিনের বোন লাভলী অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী রহমত উল্লাহ ওরফে সেন্টু গত বছরের ৯ মার্চ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন। তাঁকে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। এখনো তাঁর কোনো খোঁজ নেই। জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, 'সেন্টু ঢাকার সায়েদাবাদ বার্স টার্মিনাল এলাকার শ্রমিকনেতা খায়রুল হত্যা মামলার আসামি। তিনি ঢাকাতেই থাকেন। তিনি বিয়ে করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড়ে। তবে তাঁকে অপহরণের ব্যাপারে অমরা কিছুই জানি না।'

No comments:

Post a Comment