dp power by developed & designed web blogs

Saturday, May 3, 2014

‘পা কাটার কথা বলিনি মাকে’

'রগ কাটেনি। কুপিয়ে মাসুদের ডান পা আলাদা করে ফেলেছে শিবির ক্যাডাররা। তবে পা কাটার কথা মাকে এখনো বলিনি। উনি মানসিক রোগী। জানলে উনি মারা যাবেন।' সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদের বড় ভাই আয়াতুল্লাহ বেহেস্তী। গত ২৯ এপ্রিল সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাসুদকে কোপায় দুর্বৃত্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বিভাগের ছাত্র মাসুদের সঙ্গে থাকা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা মোহাম্মাদ সালেহকেও কোপানো হয়। মাসুদের ভাই আয়াতুল্লাহ এবং সালেহর বাবা জালালউদ্দিনের দাবি, ছাত্রশিবির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার সময় পুলিশ কাছে থাকলেও কেউ মাসুদ ও সালেহকে রক্ষায় এগিয়ে আসেননি।
গুরুতর অবস্থায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আনা হয়। পঙ্গু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, সালেহ কিছুটা সুস্থ; তবে মাসুদের অবস্থা ভালো নয়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, 'মাসুদের ডান পা তো কাটাই পড়েছে। বাঁ পায়ের অবস্থা ভালো নয়। মাসুদের জ্বর না কমা ভালো লক্ষণ নয়। কিডনিতে প্রভাব পড়তে পারে।' অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, মাসুদের ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে। পাঁচ ইঞ্চির মতো গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর পুরো শরীরে ১২টির মতো সেলাই লেগেছে। অবস্থা ভালো না হওয়ায় গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আইসিইউয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে মাসুদকে। সেখানে অনেকটাই নিথর পড়ে আছেন আছেন তিনি। ডান পা গোড়ালির ওপর থেকে কাটা। বাঁ পায়ের পুরোটা, মাথা, দুই হাত ব্যান্ডেজ করা।
এ অবস্থায় মাসুদ অনেকটাই মনের জোরে বেঁচে আছেন—এমনটাই মনে করছেন তাঁর ভাই আয়াতুল্লাহ বেহেস্তী। তিনি জানান, বাম পা কেবল চামড়ার ওপর ঝুলে আছে। বিদেশে নেওয়া হলে হয়তো মাসুদের একটি পা রক্ষা করা যাবে। তবে বিদেশ কেন, দেশে চিকিত্সা করানোর মতো আর্থিক সংগতি মাসুদের পরিবারের নেই। আর বেঁচে থাকলে জীবনের বাকিটা সময় শারীরিক যন্ত্রণা ভোগাবে মাসুদকে। বড় ভাই বেহেস্তী বলেন, 'কথা বলতে গেলে মুখ ব্যথা করে মাসুদের। তবুও মায়ের সঙ্গে সময় পেলেই মুঠোফোনে কথা বলতে হচ্ছে ওকে। কারণ মা কিছুই জানেন না। আমার বাবাও বেঁচে নেই। তাই মাকে দেখারও কেউ নেই।' এদিকে পঙ্গু হাসপাতালের সিডি ওয়ার্ডে ৩৯ নম্বর বেডে শয্যাশায়ী আছেন সালেহ। তাঁর মাথায় ও ডান পায়ে কোপানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তার প্রচণ্ড জ্বর ছিল। তবে আজ সকালে আর জ্বর আসেনি।
সালেহ বাবা জালাল উদ্দিন বলেন, 'পায়ের রগ কাটতে পারেনি শিবিরের লোকজন। তবে ডান পায়ের রক্ত নালি কাটা পড়ায় আগামী কাল সকালে সালেহর আরও একটি অপারেশন করা হবে। কিন্তু এত বড় ঘটনার সময় পুলিশও নীরব ছিল। আর এখন প্রশাসনও চুপ আছে।' এদিকে জানা গেছে, নৃশংস এই হামলার ঘটনায় এখনো পর্যন্ত মামলা হয়নি। আজকালের মধ্যে মাসুদ ও সালেহর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হতে পারে।

No comments:

Post a Comment