dp power by developed & designed web blogs

Thursday, May 15, 2014

ভারতের লোকসভা নির্বাচন: সুষমা ও আদভানিকে নিয়ে সমস্যা- সরকার গঠনে মশগুল বিজেপি, বিমর্ষ কংগ্রেস by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

বুথ-ফেরত জরিপে উৎফুল্ল বিজেপি সরকার গঠনের চিন্তায় মশগুল। নরেন্দ্র মোদির সরকারে কারা থাকবেন, কে কোন মন্ত্রণালয় পেতে পারেন, বিজেপিতে সাংগঠনিক রদবদল কী রকম হবে বা নতুন কোন কোন দল এ সরকারের সমর্থনে এগিয়ে আসতে পারে, গতকাল বুধবার দিনভর এ বিষয়গুলো নিয়ে বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা তৎপর থেকেছেন। অন্যদিকে চূড়ান্ত ফল না বেরোলেও কংগ্রেস বেশ বিমর্ষ। আকবর রোডের সদর দপ্তরে বিষণ্নতা ছেয়ে আছে যেন। কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী আজ বৃহস্পতিবার দলের মুখপাত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। উদ্দেশ্য, ফল নিয়ে সবার এক সুরে কথা বলা। বিজেপির তৎপরতা বহুমুখী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় কাদের স্থান হচ্ছে, সেটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। সমস্যা প্রধানত লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরিল মনোহর যোশি ও সুষমা স্বরাজকে নিয়ে। তিনজনেই দলে সব সময় মোদিবিরোধী হিসেবে পরিচিত। আদভানি ও যোশি দুজনেই অশীতিপর, বাজপেিয়-মন্ত্রিসভায় আদভানি উপপ্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। মোদির মন্ত্রিসভায় তাঁদের স্থান কী হবে, সেটা একটা বড় সমস্যা। দলে দুজনের অবস্থান এমনই যে তাঁদের উপেক্ষা করাও শোভন আর সহজ হবে না। এ মুহূর্তে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) চেয়ারম্যান আদভানি। মোদি জমানায় তাঁকে সেই দায়িত্বে রাখাও মুশকিল হতে পারে। সুষমা ও মোদি প্রায় সমবয়সী। কিন্তু চিরদিন বিরোধী শিবিরের বলে সুষমাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রণালয় দিতে মোদির বিশেষ আগ্রহ নেই। তাঁকে লোকসভার স্পিকার করে সমস্যার সমাধান করা যায় িক না, সেই ভাবনাও রয়েছে। সুষমা গতকাল আদভানির সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করেন দলের সাবেক সভাপতি নীতিন গড়কড়িও। নীতিন, অরুণ জেটলি, অমিত শাহ ও দলের সভাপতি রাজনাথ সিংও পরস্পরের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। দুদিন আগে তাঁরা মোদির সঙ্গেও বৈঠক করেন।
মোদির মন্ত্রিসভায় যাঁদের স্থান প্রায় নিশ্চিত মনে করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অরুণ জেটলি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, শাহনওয়াজ হুসেন, স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ ঠাকুর, সাবেক সেনাপ্রধান ভি কে সিং ও সুব্রানিয়াম স্বামী। রাজনাথ সিং প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী হতে গররাজি ছিলেন। কিন্তু ইদানীং তিনিও উৎসাহী হয়েছেন। রাজনাথ মন্ত্রী হলে বিজেপির সভাপতি কে হবেন, দলকে তা ঠিক করতে হবে। সাবেক সভাপতি নীতিন গড়কড়ি তাঁর পুরোনো পদ ফিরে পেতে আগ্রহী। দুর্নীতির অভিযোগে তিনি সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। এতে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন আদভানি নিজে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় নীতিন দেখা করেছিলেন প্রভাবশালী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতাদের সঙ্গে। আদভানির সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে। নীতিন সংঘের খুবই কাছের। তাই মোদিকে সংঘের প্রতি অনুগত রাখতে তাঁকে আবার সভাপতি করা হলেও হতে পারে। মোদিকে লাগামছাড়া রেখে দিতে সংঘ একেবারেই চায় না। নীতিনকে সভাপতি পদে পুনর্বহাল না করা গেলে তিনি চান অবকাঠামোসংক্রান্ত কোনো মন্ত্রণালয়। বুথ-ফেরত জরিপ আশাতিরিক্ত ফল দেখানোয় বিজেপি ধরেই নিয়েছে, এনডিএ নিজের ক্ষমতাতেই সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু একান্তই তা না হলে তাদের বন্ধু প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিজেপির অধিকাংশ নেতা ওডির বিজু জনতা দল এবং অন্ধ্র প্রদেশের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো 'নির্ঝঞ্ঝাট' দলের সমর্থন নেওয়ার পক্ষে। এ তিন দল ছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট ছোট দলগুলোকেও তারা ধরে রাখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, একান্তই সমর্থন নিতে হলে এদের থেকে নেওয়াই ভালো। কারণ, এদের বায়না কম। জাতীয় স্তরে রাজনীতি করার উচ্চাশাও নেই। তা ছাড়া এ দলগুলো অযথা চাপের রাজনীতি করে না।
অবশ্য জয়ললিতা ও নবীন পট্টনায়েক সব সম্ভাবনার রাস্তা খোলা রাখছেন। বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন না, এমন কথা দুজনের কেউই বুধবার বলেননি। বরং দুজনেই বলেছেন, তাঁরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। ফল বেরোনোর অপেক্ষায় রয়েছেন। ওডিশায় বিজু জনতা দলের চিফ হুইপ প্রভাত ত্রিপাঠি অবশ্য এক ধাপ এগিয়ে 'রাজ্যের স্বার্থে শর্তাধীন সমর্থনের' কথা শুনিয়ে রেখেছেন। শর্তটা হলো, অনুন্নত ওডিশাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে। বিজেপির সঙ্গে ঘেঁষার ইঙ্গিত দিয়ে এনসিপির প্রফুল্ল প্যাটেল ইতিমধ্যেই বলেছেন, তাঁরা একটা স্থায়ী ও শক্তিশালী সরকার গঠনের অপেক্ষায় রয়েছেন। এনসিপি ইউপিএর অনেক দিনের শরিক। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের সঙ্গে তারা একযোগে সরকার চালাচ্ছে। প্রফুল্লের এ মন্তব্যে তাই ব্যাপক জল্পনা চলছে। বিজেপির এ তৎপরতার উল্টো ছবি কংগ্রেসে। দলকে ঘিরে বিরাজ করছে অদ্ভুত এক নীরবতা। বুথ-ফেরত জরিপ মেনে নিতে অনীহা থাকলেও তৃতীয়বারের ইউপিএ সরকার গঠন নিয়ে তারা একেবারেই আশাবাদী নয়। কংগ্রেস ফল বেরোনোর আগে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে করছে। তাদের তৎপরতা একটাই, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব যেন প্রশ্নের মুখে না পড়ে। এটা নিশ্চিত করতে গান্ধী পরিবারের অনুগতরা আগেভাগেই রাহুলকে রক্ষা করতে নেমে পড়েছেন। বিপর্যয়ের জন্য তাঁরা রাহুল-সোনিয়ার নেতৃত্বকে নয়, দায়ী করছেন মনমোহন-সরকারের ভালো কাজগুলো ঠিকমতো তুলে ধরতে না পারার ব্যর্থতাকে। এ অবস্থায় আজ রাহুল দলীয় মুখপাত্রদের বৈঠক ডেকেছেন। উদ্দেশ্য, সবাই যাতে একরকমভাবে ফলের ব্যাখ্যা করে নেতৃত্বকে রক্ষা করতে পারেন।