dp power by developed & designed web blogs

Saturday, May 3, 2014

কাল নারায়ণগঞ্জে হরতাল আহ্বান- নিহতদের চিরবিদায় জানাল পরিবার

নারায়ণগঞ্জে অপহরণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার ছয়জনের লাশের দাফন গত বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হয়েছে। নিহত অপরজন আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারের মরদেহ গত বুধবার রাতে দাহ করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিকে চন্দন সরকারের খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে আগামীকাল রোববার নারায়ণগঞ্জে সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হরতাল ডেকেছে জেলা আইনজীবী সমিতি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে নারায়ণগঞ্জে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদী থেকে বৃহস্পতিবার সকালে অপহূত লিটনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বুধবার একই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তাঁর বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমের লাশ। নিহত লিটনও কাউন্সিলর নজরুলের বন্ধু। এই সাতজন গত রোববার দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়ক থেকে অপহূত হন।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন দুলাল চন্দ্র চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, 'আমরা ময়নাতদন্তের সময় প্রত্যেক লাশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। খুব নৃশংসভাবে খুনগুলো করা হয়েছে। আর লাশ উদ্ধারের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা আগেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।' জানাজায় হাজারো মানুষ: বৃহস্পতিবার সকালে কাউন্সিলর নজরুল ও তাঁর বন্ধু তাজুল ইসলামের জানাজা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাকে অনুষ্ঠিত হয়। ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ জানাজায় শরিক হন। পরে তাঁর লাশ সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। একই দিন মনিরুজ্জামানের লাশ সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলীতে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। লিটন ও জাহাঙ্গীরের লাশও কদমতলীতে দাফন করা হয়। বুধবার গভীর রাতে চন্দন সরকারের লাশ মাসদাইর পৌর শ্মশানে দাহ করা হয়। ইব্রাহিমের লাশ তাঁর গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁয়ে দাফন করা হয়।
নজরুল ইসলামের জানাজার আগে তাঁর ছেলে নাঈম ইসলাম অশ্রুসিক্ত হয়ে বলেন, 'আমি জানি, আমার বাবাকে চক্রান্ত করে খুন করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই। আর কাউকে যেন এভাবে মরতে না হয়।' জানাজার আগে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ নজরুল ইসলাম বলেন, '২২ বছর ধরে নজরুল ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। যারা তাঁকে খুন করেছে, তাদের বিচার করতেই হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। তারা যত শক্তিশালীই হোক, বিচার হতেই হবে।' নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, 'নজরুল বেশ কিছুদিন ধরেই আতঙ্কে ভুগছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা দলীয় নেতা, পুলিশ, র‌্যাব সবাইকে জানিয়েছিলাম। তারা যদি ব্যবস্থা নিত, এই খুন হতো না।' নূর হোসেনের কার্যালয়ে আগুন: নজরুল ইসলামের জানাজা শেষে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ডে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং এ মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের কার্যালয় এবং পাশেই একটি যাত্রা প্যান্ডেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ মানুষ। ওই সময় র‌্যাব-১০, বিজিবি এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্পতিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় মামলার ২ নম্বর আসামি ও আওয়ামী লীগের নেতা ইয়াছিন মিয়ার বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে জনতা। চন্দন সরকারের বাড়িতে আইনজীবী নেতারা: বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সহসভাপতি আইনজীবী খন্দকার মাহাবুব হোসেন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বৃহস্পতিবার সকালে চন্দন সরকারের জালকুঁড়ির বাসভবনে যান। তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান। খন্দকার মাহবুব হোসেন এ সময় বলেন, এ ঘটনা অত্যন্ত নৃশংস, ভয়াবহ। এ ঘটনার পর এখন নিহত আইনজীবীর পরিবার নিরাপত্তাহীন। তিনি ঘটনার বিচার এবং খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক, জেড আই খান পান্না এবং মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল চন্দন সরকারের বাড়িতে যান এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

No comments:

Post a Comment