dp power by developed & designed web blogs

Thursday, April 24, 2014

ভারতের লোকসভা নির্বাচন: পশ্চিমবঙ্গে ছয় আসনে ভোট আজ- কঠিন লড়াইয়ে কংগ্রেস by রজত রায়

লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফায় আজ বৃহস্পতিবার ভারতজুড়ে ভোট হবে ১১৭ আসনে। ১৮ কোটি ভারতীয় তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা এটি। এখানে উত্তরাঞ্চলের চার জেলার (উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ) মোট ছয়টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে আজ।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট ছাড়া বাকি পাঁচটি আসনই কংগ্রেসের দখলে। বামপন্থীরা গত লোকসভা নির্বাচনে একমাত্র বালুরঘাট আসনটিই কংগ্রেস ও তূণমূল কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে দলীয় সংগঠন ও সমর্থকদের হারিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের ক্রমাগত দুর্বল হওয়ার যে প্রবণতা দক্ষিণবঙ্গের সর্বত্র রয়েছে, এই জেলাগুলোতে তার বিপরীত চিত্র। বরং পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সবচেয়ে বেশি শক্তি ছিল এদিকেই। আর এখানে কংগ্রেস এখন বামপন্থী, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে প্রাণপণে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে।
কংগ্রেসের জবরদস্ত নেতা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং বিদায়ী ইউপিএ সরকারের রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী মুর্শিদাবাদ জেলারই মানুষ। তাঁর কেন্দ্র বহরমপুরে অবশ্য এই দফায় ভোট হচ্ছে না। সেখানে ভোট গ্রহণ হবে একেবারে শেষ দফায়, ১২ মে তারিখে। কদিন আগেই অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, কংগ্রেস এ রাজ্যে মূলত গতবারের আসনগুলো রক্ষা করতেই লড়ছে।
কিন্তু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, অধীর চৌধুরীর নিজের জেলা মুর্শিদাবাদেই এবার আসন হারাতে চলেছে তাঁর দল। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে পর পর দুবার (২০০৪ এবং ২০০৯) মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থেকে অধীর চৌধুরীই লোকসভায় পাঠিয়েছিলেন নিজের সংগঠনের শক্তির জোরে। রাজনৈতিক জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর হাত ধরেই প্রথম লোকসভায় যান। প্রণব রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে শূন্য আসনে তাঁরই ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে সামান্য কয়েক হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থীকে হারান। এবার অভিজিৎ এতটাই কঠিন লড়াইয়ের সামনে পড়েছেন যে জঙ্গিপুর ধরে রাখা কংগ্রেসের পক্ষে দুরূহ হবে।
একইভাবে রায়গঞ্জে দীপা দাশমুন্সিও শক্ত লড়াইয়ের সামনে। দীপাকে হারাতে খোদ তাঁর স্বামী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির ভাই সত্যরঞ্জনকে তৃণমূলের প্রার্থী করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি কংগ্রেসের ভোটে দৃশ্যত ফাটল ধরাতে না পারলেও পরিবারে ফাটল ধরিয়ে অস্বস্তিতে ফেলেছেন দীপাকে। অন্যদিকে, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সাবেক সাংসদ মুহম্মদ সেলিম প্রচারে ঝড় তুলেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বয়ং সোনিয়া গান্ধীকে রায়গঞ্জে জনসভা করতে হয়েছে।
সে তুলনায় মালদহ জেলার দুই আসন মালদহ উত্তর ও দক্ষিণে অটুট আছে কংগ্রেসের দুর্গ। প্রয়াত বরকত গনি খান চৌধুরী এই মালদহ থেকে ১৯৮০ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত টানা আটবার লোকসভায় গিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, বরকতের গুণমুগ্ধ মালদহবাসী ১০ বছর পরেও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ভোটে জেতাতে কসুর করবেন না। গতবারের মতো এবারও বরকতের ভাগনি মৌসম নূর এবং ভাই আবু হাশেম খান চৌধুরী যথাক্রমে মালদহ (উত্তর) এবং মালদহ (দক্ষিণ) থেকে লড়াইয়ে এগিয়ে।
এ আসনগুলোতে বামপন্থীরা লড়াইতে থাকলেও নিজেদের জেতা আসন বালুরঘাট এবার তাঁদের হাতছাড়া হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক আরএসপি বালুরঘাটে দীর্ঘদিন সবচেয়ে বড় দল ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে তাদের সংগঠন খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তৃণমূল সেখানে প্রভাব বিস্তার করছে। এবার সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী নাট্যকর্মী ও মমতার বিশেষ আস্থাভাজন অর্পিতা ঘোষ। 'সারদা কেলেংকারিতে' তৃণমূলের যেসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে আছেন অর্পিতা।
চার জেলাতেই জনসংখ্যার একটা বড় অংশ সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়। তার মধ্যে মুর্শিদাবাদে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। যেমন, প্রণবপু্ত্র অভিজিতের কেন্দ্র জঙ্গিপুরের ৭৩ শতাংশ মানুষ মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক। কিন্তু একই সঙ্গে রাজ্যের অন্য জেলাগুলোর তুলনায় দারিদ্র্য, শিক্ষায় অনগ্রসরতা, কর্মহীনতাও এই জেলাগুলোতে প্রবল। বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর এই জেলাগুলোতে অনেক দিন ধরেই বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জমি তৈরি। প্রায় প্রতিটি আসনেই বিজেপি ৭০-৮০ হাজার ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এবার দেশজুড়ে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। ফলে, এই ছয় আসনেই বিজেপির ভোট বৃদ্ধি অনিবার্য। বিজেপি ভোট কাটার ফলে কোন দলের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে, এখন সেটাই দেখার।

No comments:

Post a Comment